সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮:৩৯ অপরাহ্ন
ইশারাত আলী, কালিগঞ্জ থেকে ::
কালিগঞ্জে আলমঙ্গীর হোসেন নামে ১৪ বছরের এক ডেঙ্গু রোগী মারা গেছেন। বৃহস্পতিবার বিকাল সাড়ে ৫টায় তিনি মারা যান বলে তার ভাই বাদশা ও কালিগঞ্জের ইউএনও সরদার মোস্তফা শাহিন নিশ্চিত করেছেন।
আলমঙ্গীর হোসেন সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলার কুশলিয়া ইউনিয়নের গোবিন্দপুর গ্রামের মোঃ সিরাজুল ইসলামের ছেলে। তিনি যশোরে একটি মাদ্রাসায় হাফিজি পড়তেন। গত কোরবানীর ঈদে ছুটিতে সে বাড়ী আসে এবং ১৯ আগস্ট বিকালে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে কালিগঞ্জ হাসপাতালে ভর্তি হন।
কালিগঞ্জ হাসপাতালে ঐ রোগীর অবস্থার চরম অবনতি হলে শেষ মুহুর্তে রেফার্ড করে কর্তৃপক্ষ। হাসপাতালের বিরুদ্ধে ডেঙ্গু রোগীদের অপচিকিৎসার বিস্তর অভিযোগ থাকলেও ব্যবস্থা নেয়নি উর্দ্ধোতন কোন কর্তৃপক্ষ। সেকারনে কালিগঞ্জে শুন্য থেকে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে হয়েছে এক।
ডেঙ্গু রোগে মৃত আলমঙ্গীর হোসেনের ভাই বাদশার দাবী, কালিগঞ্জ হাসপাতালে রোগীর কোন সেবা হয়নি। বারবার প্লাটিনেট নেমেছে।২ ১ আগস্ট বৃহস্পতিবার সকালে যখন ১০৮ ডিগ্রী তপমাত্রায় তার খিচুনী হচ্ছে তখন তাকে সাতক্ষীরায় রেফার্ড করা হয়েছে।
সাতক্ষীরা সিবি হাসপাতাল ভর্তি নেয়নি, সদর হাসপাতাল ঐ অবস্থায় খুলনায় পাঠিয়েছে। খুলনায় সিডি হাসপাতালে ভর্তি নেয়নি, সিটি হাসপালেও ভর্তি নেয়নি। পরে যখন গাজী মেডিকেলে আনা হয় তখন তার মৃত্যু হয়।
তিনি আরো বলেন, কালিগঞ্জ হাসপাতাল আমার ভাইয়ে অপচিকিৎসার দায় এড়াতে তড়িঘড়ি করে বের করে দিয়েছে। কোন হাসপাতাল আলমঙ্গীরকে আর ভর্তি করেনি। আমর ভাইয়ের মৃত্যু রাস্তাঘাটে হয়েছে।
কালিগঞ্জ হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসার ব্যাপারে গুরতর অভিযোগ এনছে অনেক রোগী ও তাদের অভিভাবকরা। আশরাফুল ইসলাম নামে একজনের অভিযোগ, ডেঙ্গু পরীক্ষার কোন উপকরণ হাসপাতালে নেই। দুই কিলোমিটার দুরে লাইফ কেয়ার সেন্টারের রিসিপশানিন্ট মাহবুবুর রহমান এসে রক্ত ইনজেকশনের সিলিমসে করে নিয়ে যায়। তার কাছে কোন সেপটি বকস্ নেই। তাপমাত্রা ঠিক থাকছেনা। ৬/৭ জনের রক্ত নিয়ে ২ কিলোমিটার যেতে রক্ত জমাট বেধে নষ্ট হয়ে যায়। ডেঙ্গু পরীক্ষা নিয়ে আমাদের সন্দেহ হচ্ছে।
আদনান জাওয়াদ ত্বকী (১৯), শ্রীকলায় বাড়ী। তার অভিভাবক নজরুল ইসলাম বলেন, আমারা আদনানকে ডেঙ্গু সন্দেহে হাসপাতালে ভর্তি করি ১৭ আগস্ট। হাসপাতালের ল্যাবে ডেঙ্গু এন এস ১ চিহ্নিত হয়। কিন্তু হাসপাতালের রোগীর রক্ত কালিগঞ্জ কলেজ মোড়ে অবস্থিত লাইফ কেয়ার সেন্টারের অভ্যর্থনা কক্ষের মাহবুবর রহমান এসে যখন পরীক্ষা করতে নিয়ে যায় এবং তা টেলিভিশন ক্যামেরা ও সাংবাদিকদের সামনে ধরা পড়ে তখন আমার খারাব লাগে। পরের দিন আমরা আদনানকে সাতক্ষীরার সিবি হাসপাতালে নিয়ে যাই এবং ওখানে ডেঙ্গু সংক্রান্ত সকল পরীক্ষা করাই। কিন্ত সেখানে আদনানের কোন ডেঙ্গু ধরা পড়েনি।
প্রথম বারেরমত ২আগস্ট কালিগঞ্জ হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হলে ঠিক তার পরে কালিগঞ্জ হাসপাতালের ইউএইচও ডাঃ তৈয়েবুর রহমানের বিরুদ্ধে অনেকে অভিযোগ করে বলেন, লাইফ কেয়ার সেন্টারের সাথে ডেঙ্গু রোগীর পরীক্ষা নিয়ে ডাঃ তৈয়েবুর রহমানের একটি কমিশন চুক্তি হয়েছে। একারনে ডেঙ্গু না হলেও তিনি সেখানে রোগী পাঠাচ্ছেন পরীক্ষা নিরিক্ষার জন্য।
রোগীদের অভিযোগের পরে এব্যাপারে কালিগঞ্জ হাসপাতালের ইউএইচও ডাঃ তৈয়েবুর রহমানের সঙ্গে কথা বল্লে তিনি প্রথমত বলেন আলমঙ্গীর হোসাইন ১৯ আগস্ট সোমবার বিকালে হাসপাতালে ভর্তি হয়। তাকে যথা নিয়মে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। অবস্থার অবনতি হলে ২২ আগস্ট বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টায় সাতক্ষীরায় রেফার্ড করা হয়। এর পরে আমি আর কিছু জানিনা।
আর চিকিৎ সা এখানে সঠিক ভাবেই হচ্ছে। আমাদের এখানে হেমাটোক্রিট পরীক্ষা হয়না। সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে ও কালিগঞ্জে একজায়গায় হয়। তারা (লাইফ কেয়ার সেন্টার) কিভাবে রক্ত নেয় আমি দেখছি। অনিয়ম হলে আমি ব্যবস্থা নেব।
এদিকে ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত আলমঙ্গীর হোসেনের নামাজে জানাযা আজ শুক্রবার বাদ জুম্মা তার বাড়ীতে অনুষ্ঠিত হবে। ইতিমধ্যে গতকাল বৃহস্পতিবার রাত ৯টার পরে কালিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহি অফিসার সরদার মোস্তফা শাহিন আলমঙ্গীরের পরিবারের সাথে দেখা করে প্রাথমিক ভাবে ১০ হাজার টাকার একটি অনুদান প্রদান করেছেন।
© All rights reserved ©sundarbonbarta.com2020
Leave a Reply